ভূমি উন্নয়ন কর ও বিভিন্ন ফি
কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনার হার:
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনার হার:
(যোগসূত্র স্মারক নং ভূঃ মঃ/শা-৩/কর/১০০/৯২-১০৬(১০০০) তারিখ ১৬/২/১৪০২ বাংলা মোতাবেক ৩০/৫/১৯৯৫ ইংতারিখে পাশকৃত সংশোধনী অনুযায়ী):
কৃষি জমির ক্ষেত্রে:
- ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) মওকুফ করে দিয়েছে ৷
- ২৫ বিঘার অধিক হতে ১০ একর পর্যন্ত জমির জন্য প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৫০ পয়সা করে ৷
- ১০ একরের উধ্বে হলে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১ টাকা হারে খাজনা দিতে হবে ৷
- দেড় যুগ পর ভূমি উন্নয়ন করসহ বিভিন্ন ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন কর বাড়বে দ্বিগুণ। অন্যান্য ফি ক্ষেত্রবিশেষ আড়াই থেকে তিন গুণ বাড়ানো হবে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে গঠিত আট সদস্যের কমিটি এসব কর ও ফি বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। কমিটি প্রতি পাঁচ বছর পর কর ও ফি পুনর্নির্ধারণ করা উচিত বলেও মত দিয়েছে। ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ কর ও ফি নির্ধারণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নামজারি, দাখিলা, জাবেদা নকলসহ বিভিন্ন খাতে সরকার যে ফি পায়, সাধারণ মানুষকে ঘুষ হিসেবে তার কয়েক গুণ বেশি দিতে হয়।
মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এই মুহূর্তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক আয় ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। কিন্তু খরচ প্রায় সোয়া ছয় শ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মহাজোট সরকারের শেষ ভাগে ভূমি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর ও ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে থাকায় শেষ সময়ে উদ্যোগটি আটকে রাখা হয়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আবারও কাজ শুরু করেছে।
জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, বেশ আগে থেকে মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কৃষিজমির কর বাড়বে দ্বিগুণ: কৃষিজমির ক্ষেত্রে ২৫ বিঘা (৮ দশমিক ২৫ একর) পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে না। এর পর থেকে ১০ একর পর্যন্ত এখন ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় শতকপ্রতি ৫০ পয়সা, এটি এক টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০ একরের বেশি প্রতি শতকের জন্য প্রচলিত কর এক টাকা। এটি বাড়িয়ে দুই টাকা করা হবে।
শিল্প-বাণিজ্যিক জমির কর বাড়ছে: ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় শিল্প-বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা জমির জন্য প্রতি শতকে কর দিতে হয় ১২৫ টাকা। এটা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই চারটি সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক জমির কর শতাংশপ্রতি ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে কমিটি।
এ ছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকা, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও ধামরাই পৌর এলাকা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা সদর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌর এলাকায় শিল্প-বাণিজ্যিক জমির কর এখন শতাংশপ্রতি ১২৫ টাকা। এটা বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হবে। একই এলাকার আবাসিক জমির কর ২২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকার প্রস্তাব রয়েছে।
শতকপ্রতি ১২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি পৌর ও উপজেলা এলাকার শিল্প ও বাণিজ্যিক ভূমির কর। এগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, নোয়াখালী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর ও পটুয়াখালী জেলা সদরের পৌর এলাকা, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকা, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার পৌর এলাকা, নোয়াখালীর চৌমুহনী ও সুনাইমুড়ি পৌর এলাকা এবং বেগমগঞ্জ উপজেলা সদর এলাকা এবং খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলা এলাকা।
দেশের অন্যান্য এলাকার শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা জমির কর ২২ টাকা থেকে ১০০ টাকা এবং আবাসিক জমি সাত টাকা থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। পৌর এলাকা ঘোষিত হয়নি, এমন এলাকায় প্রতি শতকের কর ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নামজারি ও রেকর্ড সংশোধন ফি: নামজারির আবেদন বাবদ কোর্ট ফি ২০০৮ সালে ধার্য করা হয় পাঁচ টাকা। এটা বাড়িয়ে ১০ টাকা করা হবে। নোটিশ জারি ফি দুই টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হবে। রেকর্ড সংশোধন ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হবে ৫০০ টাকা। প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান ফি ৪৩ টাকা থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিভিন্ন ম্যাপের বিক্রয়মূল্য: ২০০৮ সালে মুদ্রিত মৌজা ম্যাপের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৫০ টাকা এবং ফটোকপি ৩০০ টাকা। এটা ৫০০ ও ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া মুদ্রিত জেলা ও থানা ম্যাপ ৫০০ থেকে ৭০০, মুদ্রিত ও রঙিন বাংলাদেশের ম্যাপ এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৫০০ এবং খতিয়ান ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।